সিরাত ইবনে হিশাম (سيرة ابن هشام) ইসলামি ইতিহাসের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও সুপ্রসিদ্ধ জীবনীগ্রন্থ, যা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন ও কর্মকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে। এই গ্রন্থটি প্রাচীন আরবি সাহিত্য ও ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রেও একটি মাইলফলক হিসেবে গণ্য হয়।
সংকলন ও রচয়িতা
সিরাত ইবনে হিশামের প্রকৃত রচয়িতা ছিলেন ইবনে ইসহাক (মৃত্যু: ৭৬৮ খ্রি.), যিনি ছিলেন সর্বপ্রথম সিরাত রচয়িতাদের অন্যতম। পরবর্তীতে তাঁর এই মূল কাজটি কিছু পরিমার্জন, সংক্ষিপ্তকরণ ও ব্যাখ্যা সহকারে পুনঃসম্পাদনা করেন আবু মুহাম্মদ আবদুল মালিক ইবনে হিশাম (মৃত্যু: ৮৩৩ খ্রি.)। তাই ইবনে ইসহাকের সেই মৌলিক গ্রন্থকেই ইবনে হিশামের সংকলনে ‘সিরাত ইবনে হিশাম’ নামে পরিচিতি পায়।
বিষয়বস্তু
সিরাত ইবনে হিশাম গ্রন্থে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে:
-
মহানবীর বংশপরিচয় ও পূর্বপুরুষদের ইতিহাস
-
নবীজির জন্ম, শৈশব, কৈশোর ও যৌবন
-
নবুয়তের প্রাপ্তি ও মক্কায় দাওয়াত
-
মদিনায় হিজরত ও ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা
-
বদর, উহুদ ও খন্দক যুদ্ধ
-
হুদায়বিয়ার সন্ধি, মক্কা বিজয়
-
বিদায় হজ ও রাসূলের ইন্তেকাল
এই গ্রন্থে শুধুমাত্র ঐতিহাসিক তথ্যই নয়, বরং সাহাবিদের জীবনচরিত, কাব্য, সামাজিক প্রেক্ষাপট ও যুদ্ধনীতিও বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে।
ঐতিহাসিক মূল্য ও প্রভাব
সিরাত ইবনে হিশাম কেবল নবীজির জীবনের একটি বিশ্লেষণই নয়, বরং তা ইসলামি সভ্যতা, সংস্কৃতি ও নৈতিক শিক্ষার একটি দর্পণ। এটি পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে সিরাত চর্চার ভিত্তি স্থাপন করে এবং বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
উপসংহার
সিরাত ইবনে হিশাম একটি কালজয়ী গ্রন্থ, যা মুসলমানদের জন্য শুধু একটি ইতিহাস নয়, বরং তা একটি অনুপ্রেরণার উৎস। নবীজির জীবনের প্রতিটি অধ্যায় এই গ্রন্থে উঠে এসেছে গভীর শ্রদ্ধা, ঐতিহাসিক নির্ভরতা ও সাহিত্যিক গুণে সমৃদ্ধভাবে।
No comments:
Post a Comment